ভ্রমণ ডায়েরি: থাইল্যান্ডের পরিকল্পনা কীভাবে হলো?

থাইল্যান্ডের আগে আমার বিদেশ ভ্রমণ দুটি। প্রথম বিদেশ ভ্রমণ ছিল শ্রীলঙ্কায়। অদ্ভুত বিষয় হলো শ্রীলঙ্কা নিয়ে আমি কিছু লিখে উঠতে পারিনি। শ্রীলঙ্কার কলম্বো শহরে ২০১৬ সালের এপ্রিল মাসে গিয়েছিলাম। অসাধারণ একটা পরিচ্ছন্ন দেশ। মানুষকেও যথেষ্ট নিয়মতান্ত্রিক মনে হয়েছিল। যাইহোক, দ্বিতীয়টা ভ্রমণটা ছিল ভারতে। চেন্নাই ও কলকাতা গিয়েছিলাম।

এই দুইটি ভ্রমণের আলাদা আলাদা উদ্দেশ্য আছে। শ্রীলঙ্কা গিয়েছিলাম একটি কর্মশালায়। ৬ দিন ছিলাম সম্ভবত। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত টানা কর্মশালা করে কলম্বো শহর খুব একটা দেখা হয়নি। রাস্তার পাড়ে হাঁটা, কিছু মার্কেট ও চা দোকানে ঘোরার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। তবে আমাদের হোটেলের পেছনে ভারতীয় মহাসাগরের ঢেউ আছড়ে পড়তো। আমরা সবাই কর্মশালার শেষে দীর্ঘসময় সেই ঢেউ উপভোগ করতে যেতাম।

এছাড়াও একদিন সমুদ্র পাড় ঘেঁষে নির্মাণ হওয়া মেট্রো রেলে ঘুরেছি। ট্রেনে চেপে মাউন্ট লেভানিয়া সমুদ্র সৈকত পর্যন্ত গিয়েছিলাম। খুবই অসাধারণ ছিল মাউন্ট লেভানিয়া। এর চাইতে বেশি শ্রীলঙ্কায় খুব কিছু দেখা হয়নি।

ভারত গিয়েছি ২০১৮ সালে। সেটাও চিকিৎসার জন্য। দীর্ঘ সময় এক অদ্ভুত রোগে ভুগে বাধ্য হয়ে উড়াল দিয়েছিলাম ভারতের চেন্নাই অ্যাপোলো হাসপাতাল। সেই চিকিৎসার অভিজ্ঞতা থেকে কী করে ভারতের অ্যাপোলোতে চিকিৎসা নেওয়া যায়- এ বিষয়টি নিয়ে ‘জার্নি টু চেন্নাই অ্যাপোলো’ শিরোনামে একটা লেখাও লিখেছিলাম বাংলা ট্রিবিউনে।

যাহোক, চেন্নাই থেকে ফেরার পথে কলকাতা হয়ে বাংলাদেশ ফিরেছি। চেন্নাই ও কলকাতায়ও মার্কেট ছাড়া খুব কিছু দেখার সুযোগ ও সময় হয়ে ওঠেনি। তবে চেন্নাইয়ে জিনিসপত্রের দাম অত্যাধিক কম মনে হয়েছিল। বিশেষ করে শাড়ির দাম খুবই সাশ্রয়ী। আরও কিছু সময় পেলে তাদের শাড়ির মার্কেটের ওপর একটা লেখা লিখতে পারতাম।  

আগের দুটি দেশের কথা উল্লেখ করার কারণ আছে। প্রথমত, দুইটি দেশ ভ্রমণে যাওয়া হয়েছিল কাজে। ঘুরার কোনো উদ্দেশ্য কিংবা সুযোগ খুব কম ছিল। দ্বিতীয়ত, শ্রীলঙ্কায় গিয়েছিলাম পরিচিত কাছের কয়েকজনের সঙ্গে আর ভারত গিয়েছিলাম বোন-দুলাভাইকে সঙ্গে নিয়ে।

সে অর্থে থাইল্যান্ডেই গিয়েছি একদম ঘুরে বেড়ানোর উদ্দেশ্যেই। আমার স্ত্রী নিতু ও দুই সন্তান রীভ ও রীভানকে কোলে নিয়ে রওনা দিয়েছিলাম থাইল্যান্ড।

পরিকল্পনা পর্ব:

‘দেশের বাইরে কোথাও যাবো’ এই ভাবনাটা আসে গত বছরের (২০১৯) সেপ্টেম্বর মাসে। তখন আমরা গিয়েছিলাম নাটোর। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের বন্ধু তমাল হলো গুরুদাসপুরের ইউএনও। তমালের আমন্ত্রণে আমরা বন্ধুরা মিলে যাই নাটোর। সেখানে দেড় দিনের ঝটিকা সফর আমাদের আরও ঘুরে বেড়ানোর খোরাক জোগায়। আসার পথে বাসে বসেই আমরা আলাপ করি, এরপর কোথায় যাওয়া যায়। এসব নিয়ে কথাবার্তা চলছিল ঢাকায় ফেরার পরও। কিন্তু নির্দিষ্ট গন্তব্য ঠিক হচ্ছিল না। পরে অক্টোবরে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছোটভাই হিমেলের (আমরা সবাই বন্ধুর মতই) জন্মদিনে প্রাথমিক আলোচনায় আসে- হয় নেপাল না হয় ভূটান ঘুরতে যাবো।

ফেসবুকে আমাদের একটা ম্যাসেঞ্জার গ্রুপ আছে। নাম হলো ‘গপশপ’। সেখানে কখনো নেপাল, কখনো ভুটান, কখনো বালি, কখনো ভারত নিয়ে ব্যাপক ও বিস্তর আলোচনা চলতে থাকে লম্বা সময় ধরে। বলতে হয়, আলোচনার মাধ্যমে মোটামুটি বিশ্ব ভ্রমণ করে ফেলছিলাম। কিন্তু যখনই টাকা পয়সার হিসেব শুরু হয় তখন একটা একটা দেশের প্ল্যান বাতিল হয়।

কম খরচে কোথায় ঘুরতে যাবো? এই পরিকল্পনায় টিকে থাকে ভারতের কলকাতা। এসব নিয়ে আমাদের আলোচনা কিছু আগায়। সবচাইতে বেশি আগ্রহের নিয়ে আমরা কয়েকজনই আলোচনা চালিয়ে যাই। আমি, পারভেজ (আমার বন্ধু), নদী ও ফাহিম (নদী ও ফাহিম স্বামী-স্ত্রী)। তাদের সবার সঙ্গেই আমাদের পারিবারিক সম্পর্ক।

আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের বন্ধু সাব্বিরের একটা ট্রাভেল এজেন্সি আছে। এই ব্যবসায় সে দীর্ঘদিন জড়িত। আগে বাবার ফার্মে কাজ করতো। পরে সম্ভবত ২০১২ সালের দিকে নিজেই একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে। শুক্রাবাদে ছোট্ট এক রুমে গড়ে তোলে কসমস হলিডে। সেখান থেকে ২০১৯ পর্যন্ত তার সফলতা চোখে পড়ার মতো। সত্যিকার অর্থে ঈর্ষা করার মতই। সাব্বিরের কসমস হলিডে পরে সোবহানবাগ মসজিদের পাশে প্লাজা এ.আর মার্কেটের চতুর্থ তলায় বড় পরিসরে নিয়ে যায়। বিশাল চাকচিক্যময় অফিস। গতবছর সে বনানীতেও একটা ব্রাঞ্চ খুলেছে। তার অফিসে আমার শ্যালক নিলয়ও চাকরি করে। তো, এসব বিবেচনায় নিয়ে একদিন সাব্বিরকে ফোন দিয়ে বললাম, বিদেশ ঘুরতে যাবো, কমের মধ্যে কোথায় করা যায় একটা প্ল্যান করে দে।

সাব্বির বলল, নিলয়কে বললেই সব কিছু বাজেট প্ল্যান সে করে দেবে।

ওই থেকেই মূল পরিকল্পনা শুরু।

কিন্তু কোথায় যাবো?

ভারতের কলকাতা? নেপাল নাকি ভুটান? এই তিন দেশেই আমরা ঘুরপাক খাচ্ছিলাম।

আমার বাজেটের মধ্যে কলকাতাই শ্রেষ্ঠ। সেখানকার বই বাজার, কফি হাউজ, রবীন্দ্রনাথের বাড়ি, সায়েন্স সিটি এসব দেখার আগ্রহ ছিল ব্যাপক। কিন্তু বিপত্তি হলো, আমার স্ত্রী নিতু খুব একটা আগ্রহ পায় না। সে ঘুরেই ঠাট্টা করে বলে, আমরা তো বিদেশ যাবো কলকাতা তো ঢাকার মতোই। তার সঙ্গে তাল মেলালো নদী ও ফাহিম।

একদিন বনানীতে এই বিষয়ে মিটিং ডাকা হলো। সেখানে আমি-নিতু, ফাহিম-নদী ও পারভেজও এলো। আসার আগে পারভেজ বললো, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডের বাজেট প্ল্যান যেন কসমস থেকে নিয়ে আসি। সেভাবে নিলয় আমাদের বাজেট প্ল্যান পাঠালো।

একটা রেস্টুরেন্টে আমরা দীর্ঘসময় হিসাব কষলাম। মালয়েশিয়া বাজেট ক্রস করে। থাইল্যান্ডও করে। তবে পারভেজের বক্তব্য হলো, থাইল্যান্ডে চেপে চুপে কিছুটা কমিয়ে ঘুরা সম্ভব। সে এর আগে থাইল্যান্ড গিয়েছে। ওই অভিজ্ঞতা থেকেই বলেছে, থাইল্যান্ডে প্লেন ফেয়ার বাদ দিলে কম খরচে ঘুরে আসা সম্ভব। সেক্ষেত্রে দেখি খাবার মানে বাংলা খাবার না খাওয়া এবং সাধারণ হোটেলে থাকলে খুব কম সময়েই সম্ভব।

এরপর থেকে ‘গপসপে’ শুধু আলোচনা আর আলোচনা। আর ইউটিউবে দেখা- কী আছে, কত খরচ পড়তে পারে এই সব বিষয় নিয়ে ঘাটাঘাটি। সত্যি কথা বলতে, থাইল্যান্ডের ভিডিওগুলো আমাকে মহোগ্রস্ত করে তোলে। আমিও মনে মনে চাইছিলাম, থাইল্যান্ড হলে মন্দ হবে না।

শেষমেষ সিদ্ধান্তে আসি থাইল্যান্ডেই যাবো। এরই ফাঁকে আমার পাসপোর্ট থাকলেও এক্সপায়ার হয়ে গেছে। নিতু আর দুই ছেলের পাসপোর্ট নেই। তাদের পাসপোর্ট করতে দেওয়া হলো। হাতেও পেলাম। ততক্ষণে নভেম্বর পার হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু নির্দিষ্ট ভ্রমণ জায়গা ঠিক হয়নি।

আমি একটা নোট করলাম।

থাইল্যান্ড গেলে কোথায় কোথায় যাবো। খরচ কত পড়বে সে হিসাব। কলকাতা গেলে কোথায় কোথায় যাবে, খরচ কত পড়বে। এভাবে নোট সাজাতে লাগলাম।

মধ্যবিত্তের তো এই এক সমস্যা। অঢেল অর্থ নেই। জমানো যা আছে তার ভেতর ঘুরে আসতে হবে। চাকরি ছাড়া এক্সট্রা কোনো ইনকামও নেই যে সেটা দিয়ে বিলাসিতা করবো। সম্ভব নয়।

কোনো হিসাবই যখন মেলে না তখন রাগ করে একদিন বলে ফেললাম, ‘ধুর এত টাকা খরচ হবে তার চাইতে নেপাল যাই’।

শুরু হলো, নেপালের ভিডিও দেখা। কিন্তু মনে আটকে আছে থাইল্যান্ড। ফাহিমের সঙ্গে বললাম, নেপালই যাবো। ফাহিমও ইউটিউব দেখে বলে, ‘শেরিফ ভাই, নেপালের ভিডিও দেখে আকর্ষণ পাচ্ছি না’।

তার মধ্যে আমার পরিচিত একজন লেখক শারমিন শামস আপা থাকেন নেপাল। ওনার সঙ্গে কথা বললাম। উনি বললেন, বাচ্চাদের নিয়ে ডিসেম্বরের শেষে কিংবা জানুয়ারির শুরুতে না আসাই ভালো। কারণ প্রচণ্ড ঠাণ্ডা। তবে আপা খুব আন্তরিক। বলে রাখলেন, নেপাল আসলে অবশ্যই যেন ওনাকে জানাই।

যাহোক, ওই দিকে ফাহিম শুরু থেকেই আটকে ছিল থাইল্যান্ড। আমারও ভিডিও দেখে আবার থাইল্যান্ডে এসেই ঠেকে।

একদিন সব কিছু আলোচনা করতে যাই, সাব্বিরের কসমস হলিডে। দীর্ঘ আলাপের পর সাব্বির একটা অফার দিয়ে বসলো। সেটা হলো বালিতে একটা গ্রুপ ট্যুর হবে। ডিসেম্বরের সম্ভবত ১২ তারিখ থেকে। সুতরাং সেখানে আমরা যেতে আগ্রহী হলে কমের মধ্যে ব্যবস্থা করে দেবে। কিন্তু এখানে একটা সমস্যা আছে। নদী হলো বিশ্ববিদ্যালয়  শিক্ষক। আর নিতুও হলো স্কুল শিক্ষক। দুজনের জন্যই এটা হলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শীতকালীন বন্ধের ঠিক আগের সময়। ছুটি সংক্রান্ত একটা জটিলতা আছে।

আমরা জানালাম, ওরা যদি ছুটি ম্যানেজ করতে পারে তবে বালি কনফার্ম। এরপর সে রাতে শুরু হলো বালির ইউটিউব ভিডিও দেখা। সকালে নদী জানালো সে ছুটি পাবে। অন্যপ্রান্তে নিতু জানালো, সে ছুটি পাচ্ছে না। এটা অনেকটা অনুমেয় ছিল। স্কুলে এই সময়ে ছুটি পাওয়া খুব মুশকিল। সবার মন খারাপ হয়ে গেলো।

যাইহোক, আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম থাইল্যান্ডেই যাবো। এখন ভিসার অ্যাপ্লাই করতে হবে।

ভিসার বিড়ম্বনা:

ডিসেম্বর মাস। ট্রাভেল এজিন্সিগুলো ভিসা পেতে সময় নিচ্ছে অনেক। প্রচুর লোক অ্যাপ্লাই করছে। কারণ সামনে থার্টি ফার্স্ট। চাপ বেড়ে গেছে। তাদের নাকি ভিসা আনতে সময় লাগে ২০-৩০ দিন। এক মহা ঝামেলা হয়ে গেলো। ভিসা ব্যক্তিগতভাবে জমা দিতে নাকি ভোরবেলা লাইনে দাঁড়াতে হয়। লম্বা লাইন। তার মধ্যে নাকি ৫০ জনের বেশি জমা নেয় না। কোনোদিন নাকি ৩০ জন নিয়ে ক্লোজ করে দেয়। খুবই সমস্যার কথা। সাব্বিরের সঙ্গে আলাপ করলাম। সাব্বির বলল, আমাকে দিলে একমাসও লাগতে পারে। তার চাইতে তুই ব্যক্তিগতভাবে জমা দে। ১ সপ্তাহর মধ্যে পেয়ে যাবি।

আমাদের একটা সুবিধা ছিল জায়গায় জায়গায় পরিচিত জনের সহযোগিতা পেয়েছি। এই দেশে পরিচিতজন কোথাও না থাকলে অন্ধকারে হাতড়ে বেড়াতে হবে। যেমন, পাসপোর্ট পাওয়ার ক্ষেত্রেও সহকর্মী লাবু ভাই অনেক সহযোগিতা করেছেন। ওই অফিসের আগা-মাথা আমি কিছুই বুঝি না। লাবু ভাই সঙ্গে করে নিয়ে সব ঝক্কিকে সহজ করে দিয়েছেন। এজন্য আমি কৃতজ্ঞ।

থাইল্যান্ডের ভিসা সেন্টার দুটি। তার মধ্যে একটি হলো গুলশানের সায়মন আরেকটা বাড্ডায়। সায়মনে আমাদের বন্ধু পারভেজের স্ত্রী চাকরি করেন। সেক্ষেত্রে তিনি আমাদের অনেক সাজেশন ও প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানিয়ে সহযোগিতা করেছেন। আমরা ভাবীকে বারবার বলেছি, লাইন ব্রেক করে আমাদের নিতে হবে এমন হেল্প দরকার নেই। শুধু কখন যেতে হবে, গিয়ে কী করতে হবে এসব জানালেই হবে।

যাইহোক, একদিন ভোরবেলা আমি গিয়ে লাইনে দাঁড়ালাম। সেখানে নিয়ম হচ্ছে সবার আগে যিনি আসবেন তিনি একটা কাগজে নাম লিখে দাঁড়িয়ে যাবেন। তার আগে আরেকটা কথাও বলে নিতে হবে, যত ধরনের কাগজপত্র লাগে সব সাজিয়ে দিতে সহযোগিতা করেছে কসমস হলিডে

লাইনে ভোর ৬টায় দাঁড়িয়েছি, জমা দিতে পেরেছি ১২ টায়। খুব বেশি যে ঝক্কি পোহাতে হয়েছে তা নয়। আমার জমা দেয়ার পরদিন ফাহিম জমা দেয়।

ওই সপ্তাহেই আমরা ভিসা পেয়ে যাই।

ভিসার জন্য কী কী কাগজ নিয়েছিলাম সেটা একটু আপনাদের বলে দিতে পারি।

১. ভিসা অ্যাপ্লিকেশন ফর্ম পূরণ করে সই করতে হবে। এই ফর্মটি অনলাইনেই পাওয়া যায়।

২. পাসপোর্ট (৬ মাসের মেয়াদ থাকতে হবে)।

৩. পাসপোর্টের মূল পাতার ফটোকপি (যেখানে আপনার ছবি ও সকল তথ্য রয়েছে)।

৪. দুই কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি ( ৩.৫×৪.৫ সে.মি.)

৫. ছয় মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট এবং ব্যাংক সলভেন্সি সার্টিফিকেট। এক্ষেত্রে মাথায় রাখবেন, থাইল্যান্ডে যদি একা যান তবে কমপক্ষে ৬০ হাজার থাকতে হবে। পরিবার নিয়ে গেলে ১ লাখ ২০ হাজার দেখাতে হবে। তবে যত বেশি রাখবেন তত ভালো। আর একাউন্টে রেগুলার ট্রানজেকশন থাকতে হবে।  

৬. হোটেল বুকিং ডকুমেন্ট। এটা বুকিং ডট কম থেকেই করতে পারবেন। আমাদের এসব করে দিয়েছিল কসমস হলিডে

৭. বিমান টিকেট বুকিং কপি ( কোন ট্র্যাভেল এজেন্ট থেকে নিতে হবে যদি নিজে জমা দেন)

৮. চাকরিজীবী হলে অফিসের প্যাডে ছুটি মঞ্জুরের চিঠি নিতে হবে। আর যদি কারও ব্যবসা হয় তবে ট্রেড লাইসেন্স বা জয়েন্ট স্টক রেজিস্ট্রেশন এর ট্রান্সলেট নোটারাইজড কপির সঙ্গে অরিজিনালের ফটোকপি।

৯. ভিজিটিং কার্ড।

১০. ন্যাশনাল আইডি কার্ডের ফটোকপি।

প্লেনের টিকিট:

যেদিন ভিসা পাই সেদিনই রাতে কসমসের অফিসে হাজির হই প্লেনের টিকিট কাটতে। শুরুতে আমাদের প্ল্যানটা ছিল যেহেতু থার্টিফার্স্ট সামনে তাই জানুয়ারির ২ অথবা ৩ তারিখে যাবো। তাতে খরচ কিছু বাঁচানো যাবে।

এখন সাব্বির প্রশ্ন করে বসলো, থাইল্যান্ড কোথায় কোথায় যাবি?

আমি বললাম, ব্যাংকক যাবো আর পাতায়া।

এদিকে ফাহিম বলে বসলো, না-না আমরা ফুকেট-ব্যাংকক যাবো।

হিসেব করে দেখা গেলো ফুকেট গেলে আমাদের পার পারসন খরচ বেড়ে যাবে ১৫ হাজার টাকা। বুঝতে হবে, আমার পরিবারে চারজন। আমি-নিতু ও দুই ছেলে।

আমি রাজি হলাম না। বললাম, আমার পক্ষে এটা এফোর্ট করা সম্ভব হবে না।

কিছুক্ষণ চুপ থেকে ফাহিম জানতে চাইলো, ঠিকাছে ফুকেট বাদ। তাহলে চলো থার্টি ফার্স্ট করি। এই আলাপে সাব্বিরও যোগ দিয়ে বলল, যাবি যখন থার্টি ফার্স্টটা করে আয়। মজা পাবি।

এছাড়াও সাব্বির বলল, আরো এক কাজ করতে পারিস। তোরা ঈদের পরেও প্ল্যান করতে পারিস। এখন থেকে বুকিং দিয়ে দিলে তখন তোর খরচও অনেক কমে আসবে।

ফাহিম বলে বসলো, না ভাই গেলে এখনই যাবো। দরকার নাই ঈদের পর নেয়ার।

সত্যিই যদি ঈদের পরে প্ল্যান করতাম তাহলে অবস্থাটা কী দাঁড়াতো? এই করোনাভাইরাসের সময় মনে পড়ছে! টাকা তো গচ্চা যেতই মনটাও খারাপ হতো।  

যাইহোক, থার্টি ফার্স্ট করতে রাজি হলাম। এখন এই অনন্দের মূল্য কত? মূল্য হলো সব কিছুর খরচ বেড়ে যাবে। তার মধ্যে অন্যতম প্লেন ফেয়ার।

২ অথবা ৩ জানুয়ারি গেলে প্লেন ফেয়ার পড়বে ২২ হাজার। আর থার্টি ফার্স্ট সামনে রেখে ৩০ ডিসেম্বর গেলে পড়ছে ২৬ হাজার। যাক, ফাহিমকে খুশি করতে রাজি হলাম। এটা ফুকেট থেকে ভালো। বাঁচা তো যাবে।

প্লেনের টিকিট ভিসা পাওয়ার আগেরদিন পর্যন্ত থাই এয়ারওয়েজে ছিল ২১ হাজার টাকা। কিন্তু ঠিক সেদিনই থাইয়ের টিকিটমূল্য বেড়ে হলো ৩৯ হাজার টাকা। অস্বাভাবিক বিষয়। বাধ্য হয়েই আমরা ইউএস বাংলার টিকিট কাটলাম।

মনে বড় ফুর্তি জমা হলো। প্রথমবার স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে ঘুরতে যাচ্ছি দেশের বাইরে। কিছুটা মেজাজও বিগড়ে ছিল। কারণ যখন প্ল্যান করছিলাম তখন মানুষ সংখ্যা ছিল ১০ জন। কিন্তু ভিসার অ্যাপ্লাই করার দিন যত এগিয়ে আসলো ততই মানুষ কমতে কমতে আমার পরিবার আর ফাহিম নদী ছাড়া কেউ রইলো না। সবারই সমস্যা। পারভেজ প্ল্যানের শুরু থেকে থাকলেও শেষ পর্যায়ে এসে জানালো, সে যাবে না।

এটা আমি জানতাম। কারণ বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকে তাকে চিনি। শেষ পর্যায়ে না যাওয়ার ব্যারামটা ওর পুরনো। এই লাইনটা পড়ে পারভেজ আমাকে গালি দিবে এটাও জানি। তবুও এটা যে সত্য তা পারভেজ নিজেই স্বীকার করবে আশা রাখি।

টাকা-পয়সা জোগাড়:

বাচ্চাদের নিয়ে বিদেশ ভ্রমণ চারটি খানি কথা না। আমি নিজে অনেক ভীতু প্রকৃতির মানুষ। সেখানে দূরদেশে বাচ্চাদের নিয়ে যাবো তাই প্রস্তুতি শুরু করা প্রয়োজন। প্রতিদিন টাকার হিসেব করি। কী করবো কিছুই হিসাব মিলাতে পারি না। এদিকে কসমসকেও কিছু টাকা দিতে হবে। সব মিলিয়ে চিন্তার পাহাড় জমে গেলো। মজায় মজায় প্ল্যান তো করলাম, ভিসা তো করলাম, প্লেনের টিকিটও কেটে ফেললাম। এখন তো যেতে হবে। যা জমানো আছে তার সবটাও মনে হচ্ছে কম হবে।

এ সময় প্রথমেই আম্মু আমাকে টাকা দিলো। ওদিকে শ্বশুরের কাছ থেকেও আসলো আরও কিছু টাকা। বিষয়টা মন্দ না। আরও চমকের বিষয়টা হলো আমাদের যাওয়ার আগে আব্বুও নিতুকে ডলার দিলো। ব্যস! আমাদের আর পায় কে! নিশ্চিন্তে যাত্রা হবে। কোনো সন্দেহ নেই। সকলের সম্মিলিত আর্থিক জোগানে এই ট্যুর হতে চলছে। সত্যিই স্মরণীয় হয়ে থাকবে। (চলবে)

পরবর্তী পর্বে থাকবে: শাহজালাল থেকে সুবর্ণভূমি

ভ্রমণ ডায়েরি: থাইল্যান্ডের পরিকল্পনা কীভাবে হলো?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to top