ফাতিমা আল-ফিহরি: অস্তিত্বহীন নাকি পুরুষতন্ত্রের শিকার?

সারাংশ:

পৃথিবীর সবচাইতে প্রাচীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হলো মরক্কোর ইউনিভার্সিটি অব আল কোয়ারাউইনি। গিনেসবুকের তথ্যমতে ৮৫৯ খ্রিষ্টাব্দে মরক্কোর ফেজ শহরে এই বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয় এবং বর্তমান সময় পর্যন্ত কার্যক্রম টানা পরিচালিত হয়ে আসছে। বিভিন্ন গবেষকদের মতে, এই বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন ফাতিমা আল-ফিহরি নামে একজন নারী। কিন্তু যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণের অভাবে অনেকেই নামটি খারিজ করে দেন। এ নিবন্ধে আমরা দেখবো, আসলেই কি ফাতিমা আল-ফিহরি একটি মিথ নাকি পুরুষতান্ত্রিক রাজনীতির শিকার হয়ে ইতিহাস থেকে হারিয়ে গেছেন। এই নিবন্ধে বিভিন্ন সোর্সগুলো একসঙ্গে করে বিশ্লেষণের চেষ্টা করা হয়েছে।

এই নিবন্ধটিকে আরো সমৃদ্ধ করার জন্য ইউনিভার্সিটি অব কোয়ারাউইনিতে একটি ইমেইল করা হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে মেইলটি বাউন্স করে। তাই ইউনিভার্সিটির পক্ষ থেকে সরাসরি কোনো তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। পুরো ওয়েবসাইটটি আরবি ভাষায় হওয়ায় অন্য কোনো মেইল আইডি শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।     

ফাতিমার আল-ফিহরির পরিচয়

ফাতিমা আল-ফিহরির জন্ম সালের সঠিকতা নিয়েও যথেষ্ট বিতর্ক রয়েছে। তবুও ধারণা করা হয় ফাতিমার জন্ম বর্তমান সময়ের তিউনিশিয়ার কাইরোয়ান শহরে ৮০০ খ্রিষ্টাব্দে। বাবা মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল-ফিহরি ছিলেন ব্যবসায়ী। কাইরোয়ান শহরে ব্যবসায়ী হিসেবে খুব বেশি সুবিধা করতে পারছিলেন না আবদুল্লাহ। তাই আল-ফিহরি পরিবার কাইরোয়ান শহর থেকে মরোক্কোর ফেজ শহরে শরণার্থী হিসেবে প্রবেশ করেন।

এখানেও রয়েছে নানামুখী মত। ইনসাইড এরাবিয়া ওয়েবসাইটের[১] একটি নিবন্ধের তথ্য মতে, অনৈসলামিক কর আরোপের কারণেই ফাতিমার পরিবার কাইরোয়ান থেকে ফেজ শহরে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নেন।

মরোক্কোর ফেজ শহরে এসে আবদুল্লাহর ব্যবসা ব্যাপকভাবে সাফল্য অর্জন করে। ফলে ফাতিমা ও তার বোন মরিয়ম দুজনই শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পান। যদিও ফেজ শহরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের যথেষ্ট অভাব ছিল। প্রচুর পরিমাণে শরণার্থীদের ভিড়ে কাইরোয়ান শহরে আলাদা চাপ তৈরি হওয়ায় এমন সংকট তৈরি হয়। ওই আমলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বলতে ছিল ধর্মীয় শিক্ষা অর্থাৎ আমরা যেটিকে মাদ্রাসা বলে থাকি। 

যেভাবে তৈরি হলো বিশ্ববিদ্যালয়:

খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে মারা যান ফাতিমার বাবা ও স্বামী। আর এতে করে দুই বোন ফাতিমা ও মরিয়ম দুজনই নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েন। দুজনই তখন সিদ্ধান্ত নেন বাবার দিয়ে যাওয়া অর্থ ও সম্পদ দিয়ে কমিউনিটির জন্য কিছু করবেন। দুই বোনই ভাবতে থাকেন মসজিদ নির্মাণের। তবে ফাতিমা ভাবছিলেন এর চেয়েও বড় কিছু করার। সেই ভাবনা থেকেই হাওয়ারা গোষ্ঠীর এক ব্যক্তির কাছ থেকে জমি কেনেন। [২]

৮৫৯ সালে রমজান মাসে মসজিদ নির্মাণের কাজ শুরু করেন ফাতিমা। দুই বছরে নির্মাণকাজ শেষ হয়। এই ভবনটি ছিল ৩০ মিটার লম্বা। যার মধ্যে ছিল মসজিদ, লাইব্রেরি, স্কুলের জায়গা। মসজিদটির নাম দেওয়া হয় আল-কারাউইন


আল-কারাউইন কি আসলেই বিশ্ববিদ্যালয়?

বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো ধারণাই তখন ছিল না। বিশ্বের অন্যতম বিশ্ববিদ্যালয় হলো ইতালির ইউনিভার্সিটি অব বলোগনা (১০৮৮ সালে)। তারপর আসে ঐতিহ্যবাহী ইউনিভার্সিটি অব অক্সফোর্ড ১০৯৬ সালে। অনেকেই মনে করেন আল-কারাউইন থেকে ধারণা নিয়েই এ দুটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। কেন অনেক স্কলার আল-কারাউইনকে বিশ্বের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে মনে করছেন? এর উত্তরটাও দেখা জরুরি।

ফাতিমা আল-ফিহরি মাদ্রাসা বা মক্তবের পড়াশোনার ধরনে কিছুটা বদল এনেছিলেন। বিশেষ করে তিনি ডিগ্রি প্রদান প্রথা শুরু করেন। ডিপ্লোমা ডিগ্রির জন্য বিভিন্ন কোর্স অফার করা হয়। এমনকি, সমাবর্তন অনুষ্ঠানসহ বর্তমান যুগে যে গাউন, মাথায় হ্যাট পরা হয়- এসব ধারণা ওই আমলেই নিয়ে আসেন ফাতিমা আল-ফিহরি। এছাড়াও ক্লাসে ওরাল ডিফেন্স প্রেজেন্টেশন আইডিয়াকেও সামনে আনে আল-কারাউইন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

Fatima Al-Fihri Founder of the First World University শিরোনামের একটি গবেষণা প্রবন্ধে গবেষক ফাহিরা ফেজিক সেনজিক উল্লেখ করেন, বর্তমান সময়ের যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ধারণা সেটা এসেছে ৮৫৯ সালের ফাতিমা আল-ফিহরির তৈরি মসজিদ আল-কারাউইন থেকে। তার প্রবন্ধে বলা হয়, তৎকালীন সময়ে স্কলাররা সারা বিশ্ব থেকে আল-কারাউইনে আসতেন। গবেষক ফাহিরা ফেজিক তার গবেষণায় দাবি করেন, শিক্ষায় খাতে বিপ্লব আনার পরও শিক্ষা গ্রহণে আল-ফিহরিও যুক্ত হন। তিনিও ভর্তি হন নিজের প্রতিষ্ঠিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। যেখান থেকে একটি ডিপ্লোমা ডিগ্রিও অর্জন করেন। তার ডিপ্লোমা ডিগ্রি সার্টিফিকেট এখনও সংরক্ষিত আছে। [৩]

ভেঞ্চার আফ্রিকা ওয়েবসাইটে[৪] প্রকাশিত একটি নিবন্ধেও বলা হয়, দ্য ইউনিভার্সিটি অব অল-কারাউইন প্রথমে মসজিদ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হলেও এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতোই শিক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে জিওলজি, অ্যাস্ট্রোলজি, গ্রামার, ক্যামিস্ট্রি, মেডিসিন, ম্যাথমেটিক্স বিষয়ে পড়ানো হতো।

এ মসজিদটি ব্যক্তি উদ্যোগে পরিচালিত হতো। কিন্তু ৯১৮ সালে সরকারি মসজিদে রুপান্তরিত হয়। তখনকার সুলতান জুমার নামাজে এই মসজিদে যোগ দিতেন। তার আগ্রহে পরবর্তীতে রাষ্ট্র এটির দায়িত্ব নেয়। [৫]

মুসলিম ইতিহাসবিদরা শুরু থেকেই দাবি করে আসছিলেন মানববিশ্বে আল-কারাউইনই হলো প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়। এমনকি ইউরোপিয়ান ইতিহাসবিদরাও মনে করেন এটিই হলো পৃথিবীর ইসলামিক উচ্চশিক্ষায় কলেজের মতো কাজ করা প্রাচীনতম এবং নেতৃস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি মাদ্রাসা[৬]


আল-কারাউইন মসজিদের ভেতরের দৃশ্য

একটি রিপোর্টে[৭] বলা হয়েছিল যে, মসজিদটি (আল-কারাউইন) কাইরোয়ান সম্প্রদায়ের জন্য একটি শিক্ষা কেন্দ্র হিসেবে এর ভিত্তি স্থাপন করা হয়। এটি মসজিদের মতো হলেও এখানে ধর্মীয় নির্দেশনা বিষয়ক শিক্ষা, রাজনৈতিক আলোচনার একটি স্থান হয়ে ওঠে। এমনকি ধীরে ধীরে সমস্ত বিষয়ে শিক্ষার প্রসার ঘটিয়েছে, বিশেষ করে প্রাকৃতিক বিজ্ঞানে (ন্যাচারাল সায়েন্স) তার ভূমিকা অনন্য। আল-কারাউইনের বিশেষত্ব ছিল সেখানে স্ট্যাডি সার্কেল হয়ে পড়তে হতো। যেটা বর্তমান ভাষায় আমরা বলে থাকি পাঠচক্র। এই পাঠচক্রে চাইলেই কেউ প্রবেশ করতে পারতেন না। আবেদনকারীদের বলা হতো, আল-কুত্তাবে পড়া শেষ করেই পাঠচক্রে যোগদান করতে পারবে। আল-কুত্তাব’– যেটাকে বলা যায় প্রাথমিক শিক্ষা ও কোরআনে হাফেজ। কোরআন সম্পর্কে পূর্ণ ধারণা ও আরবি ভাষায় দক্ষ হওয়ার পরই শিক্ষার্থীরা পাঠচক্রে যোগ দিতে পারতেন। বর্তমান সময়ে আমরা যেটাকে উচ্চশিক্ষায় প্রবেশ বলতে পারি। এখানে উলামারা যা শিখতে চান, কীভাবে শিখবেন এবং কোন বই থেকে তারা শিখতে চান সেটি বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ স্বাধীন ছিলেন।

১৭৮৯ সাল পর্যন্ত আল-কারাউইনে শিক্ষার প্রধান বৈশিষ্ট্য হিসেবে একাডেমিক স্বাধীনতা অব্যাহত ছিল। এরপর সুলতান মোহাম্মদ (তৃতীয়) পণ্ডিতদের নির্দেশ দিলেন যে বিষয়টি শেখানো হবে সেটি সঠিকভাবে চিহ্নিত করে সে অনুযায়ী বই নির্ধারণের। যেটি ছিল আরেকটি যুগান্তকারী ঘটনা। কিন্তু একই সঙ্গে তিনি আরেকটি ভয়ঙ্কর সিদ্ধান্তও দেন, সেটি হলো যুক্তি ও দর্শনকে  মূল কারিক্যুলাম থেকে বাদ দেওয়া হয়।

উপরের আলোচনা থেকে বোঝা যায়, আল-কারাউইন একটি মাদ্রাসা ছিল, তবে এর আধুনিক পদ্ধতি ছিল বর্তমান সময়ের বিশ্ববিদ্যালগুলোর মতো।

রাষ্ট্রীয় এডুকেশন সিস্টেমের সঙ্গে আল-কারাউইন সম্পৃক্ত হয় ১৯৪৭ সালে। ১৯৬৩ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে আল-কারাউইনকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বীকৃতি প্রদান করা হয় এবং ১৯৬৫ সালে এর নাম দেয়া হয় ইউনিভার্সিটি অব আল কোয়ারাউইনি

ফাতিমা আল-ফিহরি কি অস্তিত্বহীন?

আলোচনার শুরুতে বলা হয়েছে, ফাতিমা আল-ফিহরি নিজেই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী ছিলেন। একইসঙ্গে তার ডিপ্লোমা ডিগ্রির সার্টিফিকেট বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে সংরক্ষিত আছে। কিন্তু উইকিপিডিয়ার[৮] সূত্র বলছে, ১৯৪০ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে নারীরা প্রথমবারের মতো পড়ার সুযোগ পায়। একইসঙ্গে Fatima Al-Fihri Founder of the First World University[৯] গবেষণা প্রবন্ধেও বলা হয়, যে বিশ্ববিদ্যালয়টি একজন নারী প্রতিষ্ঠা করলেন, অর্থায়ন দিলেন সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন নারীরা পড়ার সুযোগ এত দেরিতে পেলেন, সেটাই ইতিহাসে এখনও অজানা। গবেষক উল্লেখ করেছেন, এই বিষয়টি নিয়ে ভবিষ্যতে কাজ করার অসংখ্য সুযোগ রয়েছে।


তবে ফাতিমা আল-ফিহরি ইতিহাসে প্রথম প্রবেশ করেন ১৩২৬ সালে। তার গল্পটি ইবনে আবি যার নামে একজন ইতিহাসবিদ তার দ্য গার্ডেন অব পেইজেস (Rawd al-Qirtas)[১০] নামক ঐতিহাসিক গ্রন্থে কারাউইন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে উল্লেখ করেন। এখানে খেয়াল রাখতে হবে, ফাতিমা আল-ফিহরি মারা যান ৮৮০ সালে। অর্থাৎ মৃত্যুর ৪৪৬ বছর পর ফাতিমা আল-ফিহরি ইতিহাসের আলোচনায় আসেন।

বর্তমান সময়ের অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন যে সোর্সগুলো থেকে আবু যার  ফাতিমা সম্পর্কে তথ্য নিয়েছেন সেগুলো রিলায়াবল সোর্স নয়। এমনকি কয়েকজন আধুনিক ইতিহাসবিদ সন্দেহ করেন ফাতিমার অস্তিত্ব নিয়েও।

যদিও গিনেসওয়ার্ল্ড রেকর্ডে[১১] বিশ্বের সবচাইতে পুরনো এবং এখনো কার্যক্রম চালানো বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ইউনিভার্সিটি অব আল কোয়ারাউইনির নাম যুক্ত আছে। কিন্তু এর প্রতিষ্ঠাতার নাম সেখানে উল্লেখ নেই।

তবে ফাতিমা আল-ফিহরিকে নিয়ে উইকিপিডিয়ায়[১২] একটি রেফারেন্সে দাবি করা হয়, তার সম্পর্কে খুব একটা তথ্য পাওয়া যায় না কারণ আল-কারাউইন আর্কাইভ ১৩২৩ সালে অগ্নিকাণ্ডের দুর্ঘটনায় পড়ে।

গিনেস বিশ্ব রেকর্ড সাইটে যেভাবে তথ্যটি দেয়া আছে।

সিদ্ধান্ত:

বর্তমান সময়ের ইউনিভার্সিটি অব আল কোয়ারাউইনি যে পৃথিবীর সবচাইতে প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয় এতে কোনো সন্দেহ নেই। ফাতিমা আল-ফিহরি নামে কোনো নারী যে এর প্রতিষ্ঠাতা সেটার জন্য আমাদের ইবনে আবি যার-এর তথ্যই একমাত্র ভরসা। যত ধরনের গবেষণা হয়েছে তার সবগুলোর মূল সূত্রই হলো ইবনে আবি যার রচিত দ্য গার্ডেন অব পেইজেস (Rawd al-Qirtas) গ্রন্থটি। তবে বর্তমানে ফাতিমার যে ডিপ্লোমা ডিগ্রির সার্টিফিকেট বিশ্ববিদ্যালয়টির গ্রন্থাগারে সংরক্ষিত আছে- সেটি তার অস্তিত্বের জানান দিচ্ছে।

তাহলে বলা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ফাতিমা আল-ফিহরি নামক একজন নারী শিক্ষার্থী ছিলেন। আবার নারীদের জন্য পড়াশোনা সেখানে উন্মুক্ত হয় ১৯৪০ সালে। ৮৫৯ সাল থেকে ১৯৪০ পর্যন্ত আর কোনো নারী শিক্ষার্থীদের তথ্য আমাদের সামনে নেই। তাহলে নারী হয়েও ফাতিমা কীভাবে সেখান থেকে ডিপ্লোমা ডিগ্রি অর্জন করলেন? এটা একটা বড় প্রশ্ন, আবার একইসঙ্গে বড় সূতো।

ধারণা করা যেতে পারে, প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন বলেই তিনি সেখানে পড়ার সুযোগটি নিতে পেরেছিলেন। এক্ষেত্রে আরেকটা প্রশ্নও তৈরি করে। নারী হয়ে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করলেন ফাতিমা। সেখানে তিনি নিজেও পড়লেন। তবুও অন্য কোনো নারীদের সেখানে পড়ার সুযোগ কেন হলো না?  

এমন নানাবিধ ঘটনার গড়মিলের কারণেই হয়তো ফাতিমার অস্তিত্ব নিয়ে অনেক স্কলার শঙ্কা প্রকাশ করেন। তবে এও তো সঠিক যে যুগ-যুগ ধরে নারীদের অবদমিত করে রেখেছিল বা রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজ। সেখানে ৮৫৯ সালের একজন প্রগতিশীল নারীর এত বড় বিপ্লব ঘটিয়ে ফেলার ঘটনা যে পুরুষতান্ত্রিক রাজনীতিতে ধামাচাপা পড়েনি সেটিও বা এড়িয়ে যাবো কী করে?

সুতরাং ফাতিমা আল-ফিহরি অস্তিত্বহীন’– এটা বলার কোনো সুযোগ নেই। অবশ্যই তার অস্তিত্ব ছিল। আর ছিল বলেই তার ডিপ্লোমা সার্টিফিকেট এখনও সংরক্ষিত আছে। যদি কেউ ধরে নেয় এই বিশ্ববিদ্যালয়টি তিনি প্রতিষ্ঠা করেননি। তবে এটা তো প্রমাণিত যে তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন নারী শিক্ষার্থী ছিলেন। তাহলে কি আমরা বলতে পারি, ফাতিমা আল-ফিহরি পৃথিবীর সবচাইতে প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম নারী শিক্ষার্থী?

লাইব্রেরিতে সংরক্ষিত ফাতিমার ডিপ্লোমা সার্টিফিকেট

[1] https://insidearabia.com/al-qarawiyyin-university-in-fes-brainchild-of-a-muslim-woman/

[2] https://www.dw.com/en/fatima-al-fihri-founder-of-the-worlds-oldest-university/a-53371150

[3] https://www.businessinsider.com/inside-al-qarawiyyin-the-oldest-library-in-the-world-2016-6#fittingly-el-fihriya-attended-the-university-she-helped-to-found-the-library-still-has-her-original-diploma-a-wooden-board-2

[4] https://venturesafrica.com/meet-fatima-al-fihri/

[5] https://opinion.bdnews24.com/2017/07/17/fatima-al-fihri-muslim-lady-behind-worlds-first-university/

[6] http://irep.iium.edu.my/60386/1/F%C4%81timah%20Al-Fihr%C4%ABand%20Religious%20Fraternity%20in%20Al-Qarawiyy%20in%20University.pdf

[7] http://irep.iium.edu.my/60386/1/F%C4%81timah%20Al-Fihr%C4%ABand%20Religious%20Fraternity%20in%20Al-Qarawiyy%20in%20University.pdf

[8] https://en.wikipedia.org/wiki/University_of_al-Qarawiyyin#cite_note-55

[9] https://www.researchgate.net/publication/342316228_Fatima_Al-Fihri_Founder_of_the_First_World_University

[10] https://en.wikipedia.org/wiki/Rawd_al-Qirtas

[11] https://www.guinnessworldrecords.com/world-records/oldest-university

[12] https://en.wikipedia.org/wiki/Fatima_al-Fihri#cite_note-Benchekroun-5

ফাতিমা আল-ফিহরি: অস্তিত্বহীন নাকি পুরুষতন্ত্রের শিকার?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to top