লেখা নিয়ে লেখা

আনিসুল হক বাংলা সাহিত্যের উল্লেখযোগ্য একটি নাম। যেই মানুষটি কথ্যভাষাকে সাহসের সঙ্গে নাটকের ভাষায় নিয়ে এসেছেন তিনিই আনিসুল হক। এই ধরনের ভাষার নামকরণও করেছেন কেউ কেউ। কেউ বলেন, ফারুকীয় ভাষা (আনিসুল হকের চিত্রনাট্য নিয়ে বেশ কয়েকটি নাটক নির্মাণ করেন ফারুকী। তার চরিত্রগুলোর ভাষা নিয়ে আছে ব্যাপক সমালোচনা আলোচনা। অনেকেইআইছি-করছিলাম-গেছিলাম জাতীয় ভাষাকে বলতে চান ফারুকীয় ভাষা। যদিও এটাকে ঢাকার উৎপাদন হওয়া একটি ভাষা হিসেবেই আমি বিবেচনা করি )।

পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত বিভিন্ন লেখা নিয়ে আনিসুল হকের একটি বই প্রকাশিত হয়েছিল ২০১১ সালে। বইটির নাম লেখা নিয়ে লেখা

আর সেই সূত্রে আমার এই রিভিউটিকে বলতে পারেন আলোচনা নিয়ে আলোচনা। এই গ্রন্থে মূলত আনিসুল হকের বিভিন্ন সময়কার রিভিউগুলোই প্রকাশ পেয়েছে। সূচিপত্রে কথাসাহিত্য, কবিতা, ভাষা এবং বিবিধ এই চারভাগে ভাগ করে নেয়া হয়েছে।

কথাসাহিত্য বিভাগে লেখক আলোচনা করেছেন বাংলা সাহিত্য নিয়ে। বাংলা সাহিত্যের বর্তমান অবস্থা, ভবিষ্যৎ নিয়ে বিভিন্ন লেখকের বক্তব্যও তুলে ধরেছেন। যেমন, তিনি এই সময়কার সাহিত্যিকদের বক্তব্যের মধ্যে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বলতে চাইছেন তিনজন সাহিত্যিককে। তারা হলেন, হাসান আজিজুল হক, দেবেশ রায় এবং আখতারুজ্জামান ইলিয়াস। তবে এই তিনজনের মধ্যে আখতারুজ্জামান ইলিয়াসকে তাঁর নিষ্প্রভ মনে হয়েছে। যা সত্যিকার অর্থেই যুক্তিযুক্ত। অন্যদিকে দেবেশ রায়ের উপন্যাস ভাবনাও তিনি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, উপন্যাসের মূলে থাকবে ব্যক্তিমানুষ, কিন্তু সেই ব্যক্তিমানুষ জীবন কীভাবে রাষ্ট্র কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে, সেটা হবে উপন্যাসের একটা অপরিহার্য উপদান। আর এ জায়গাটায় দেবেশ রায় মনে করেন, আমাদের উপন্যাসে একটা দীনতা আছে- আমাদের উপন্যাসে সমাজ আছে, কিন্তু রাষ্ট্র অনুপস্থিত।

দুঃখজনক হলেও সত্যি যে বর্তমানে রচিত অধিকাংশ উপন্যাসে ব্যক্তির উপর জোর দেয়া হয় কিন্তু রাষ্ট্রকে কিংবা চলমান সময়ে সংকটকে সেভাবে উপন্যাসে তুলে আনা হয় না। লেখকরা মানবজীবনের একাকিত্ব, হাতাশা, কল্পনা নিয়েই রচনা করেন গল্প কিংবা উপন্যাস। দেবেশ রায়ের বক্তব্য থেকে আনিসুল হক উপন্যাসের দুটি ধরন বের করেন। যার একটি হচ্ছে, ব্যক্তি আর রাষ্ট্র এ দুয়ের সম্পর্কের দ্বন্দ্ব নিয়ে উপন্যাস। এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে, ব্যক্তির অস্তিত্বের দার্শনিক সংকট নিয়ে উপন্যাস।

অপরদিকে আখতারুজ্জামান ইলিয়াস বলেছেন, কথাসাহিত্যের সূত্রপাত মানুষ যখন ব্যক্তি হয়ে উঠছে, তখন থেকে।

উপন্যাস নিয়ে উপক্রমণিকা শিরোনামে রচিত প্রবন্ধে কথাসাহিত্য নিয়ে আমরা নানাবিধ দর্শন সম্পর্কে জানতে পারি। আমরা জানতে পারি, উপন্যাস রচিত হয় ব্যক্তির সঙ্গে ব্যক্তির সম্পর্ক নিয়ে, ব্যক্তির সঙ্গে রাষ্ট্রের সম্পর্ক নিয়ে, আর ব্যক্তির নিজের সঙ্গে নিজের যে দ্বন্দ, তা নিয়ে। যেখানে সাহিত্যের শুরুই হয়েছে আলালের ঘরের দুলাল বা হুতুম প্যাঁচার নকশা নামক উপন্যাস দিয়ে। সেখানে এই ধারাটি মাঝপথে হারিয়েই গেছে। বর্তমান সাহিত্যে এ ধরনের উপমা নিয়ে উপন্যাস চোখেই পড়বে না। অন্যদিকে হাসান আজিজুল হক বিশ্বসাহিত্যের কথা বলতে গিয়ে ইলিয়াসের খোয়াবনামা– কে অবিস্মরণীয় উপন্যাস হিসেবে উল্লেখ করেছেন। যদিও এর ব্যাখ্যা হাসান আজিজুল হক দেননি। আর সে জন্যই আনিসুল হক আশা প্রকাশ করেন একদিন তিনি এর ব্যাখ্যা অবশ্যই দিবেন। মোদ্দাকথা হচ্ছে, মানুষের জীবন একটি ফাঁদ। আর সেই ফাঁদ নিয়েই আমাদের সাহিত্যিকরা সাহিত্য রচনা করেন। যা সম্পূর্ণ ব্যক্তিকেন্দ্রিক। ব্যক্তিকেন্দ্রিকতার বাইরে এসে সম্পূর্ণ রাষ্ট্র নিয়ে সাহিত্য রচনার দিকেই মূলত নজর দিয়েছেন আনিসুল হক।

দ্বিতীয় প্রবন্ধ মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে। শিরোনাম অতসীমামী: প্রতিভা কি সহজাত হবে পারে না? আমরা সবাই জানি, মানিকের প্রথম গল্প অতসীমামী। এবং এও জানি যে, বন্ধুদের সাথে বাজি ধরতে গিয়ে গল্প লিখে ফেলেন মানিক। যদিও পরবর্তীকালে এই গল্পটি সম্পর্কে মানিকের মন্তব্য ছিল, রোমান্সে ঠাসা অবাস্তব কাহিনী। কিন্তু এ গল্প সাহিত্য করার জন্য লিখিনি- লিখেছিলাম বিখ্যাত মাসিকে গল্প ছাপানো নিয়ে তর্কে জিতবার জন্য।  সে সময় মানিকের বয়স ছিল ২০ বছর। সে বয়সেই যে বালক অতসীমামীর মতো গল্প লিখে ফেলতে পারেন তার ভবিষ্যত সাহিত্যে উজ্জ্বলতর নক্ষত্র হয়ে উঠাটা অনেকটাই স্বাভাবিক।

আনিসুল হকের পুরো প্রবন্ধজুড়ে ছিল অতসীমামীর রিভিউ। কী করে প্রতিটি বাক্যে মানিক তার প্রতিভার ছাপ দিয়েছেন সেগুলোই তুলে এনেছেন তিনি।

 

অভিবাদন, শহীদুল জহির এবং মৃত্যু এবং মৃত্যু প্রবন্ধ দুটিতে শহীদুল জহিরকে নিয়ে আলোচনা করেছেন লেখক। বাংলা সাহিত্যে এক ভিন্ন ধারার জন্ম দিয়েছেন শহীদুল জহির। তিনি বাংলা গল্পের অন্যতম সাহিত্যিক। আনিসুল হকও উল্লেখ করেছেন, শহীদুল জহির এখন বাংলাদেশের ছোটগল্পের অন্যতম প্রধান পুরুষে পরিণত হয়েছেন।

হাসান আজিজুল হক এবং সৈয়দ শামসুল ইসলামের সাহিত্য বাস্তবতার ছাপ থাকে। কিংবা  অবাস্তব কিছুকে ব্যাখ্যা দিয়ে বাস্তবতায় নিয়ে যান তাঁরা। আবার বলার ভঙ্গির উপরও নির্ভর করে গল্পটির সম্ভাবনা। আবার যখন জাদুবাস্তবতার কথা আসে তখনও এই দুই লেখকের বর্ণনা একদম নিঁখুত। কিন্তু শহীদুল জহির তাদের থেকে একদম আলাদা। আনিসুল হকের ভাষ্যমতে, শহীদুল জহির এ দুইয়ের বাইরে বা এ দুইয়ের সমন্বয়ে-তৃতীয় আরেকটা জায়গায় তাঁর ছোটগল্পকে নিয়ে যেতে পেরেছেন। তিনি বাস্তবতার গল্প বলেননি। যা বলেছেন, বলার সুবিধার জন্য আমরা তাকে জাদুবাস্তবতা বলে অভিহিত করব।

শহীদুল জহির তার অধিকাংশ গল্পে নিয়ে এসেছে পুরান ঢাকাকে। সেখানকার মানুষের ভাষা, ব্যবহার, ঐতিহ্যের সকল বিষয়গুলোকে তিনি নিয়ে আসেন নিজের আপন প্রতিভার মাধ্যমে। তাঁর প্রতিটি গল্প ঘোর লাগানো গল্প। মোহগ্রস্থ করে ফেলতে পারেন শহীদুল জহির। সেই ব্যাখ্যাই দিয়েছে আনিসুল হক। এবং তার গল্পের বৈপ্লবিক কাজের কথাও বলেন। যেমন, তিনি ইঁদুরকে বলেন ইন্দুর, বিড়ালকে বলেন বিলাই ইত্যাদি।

শহীদুল জহিরের পুরস্কারপ্রাপ্ত উপন্যাস হচ্ছে আবু ইব্রাহিমের মৃত্যু। অসামান্য এই উপন্যাসটি প্রথম আলোর বর্ষসেরা বই হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে। যদিও জহিরের তা দেখে যাওয়া হলো না। নিজের মৃত্যুর ১৭ বছর আগে লেখা এ উপন্যাসে শহীদুল জহিরের উদ্ধৃতি দিয়ে আনিসুল হক বলেন, যখন আবু ইব্রাহিমকে দেখি তখন তাকে অনেক সময় মনে হয় গ্রিক ট্র্যাজিডির সেই সব নায়কের মতো যারা তাদের পরিণতি মেনে নেয় এবং বহন করে চলে  শহীদুল জহিরের আবু ইব্রাহিমের মৃত্যু পড়তে গিয়ে আমার বার বার যেনো মনে হচ্ছিল উপন্যাসের আবু ইব্রাহিম স্বয়ং জহির। পুরো উপন্যাসের নায়ক আবু ইব্রাহিমের মৃত্যু হাসের পালকের চাইতেও হালকা ছিল। একটি মৃত্যুর গল্প মানুষকে কতটা মোহগ্রস্ত করে তুলতে পারে তা আবু ইব্রাহিমের মৃত্যু উপন্যাস পড়লেই বোঝা যায়। এবং এই অসাধারণ উপন্যাস নিয়েই আনিসুল হক আলোচনা করেছেন।

কথাসাহিত্য বিভাগের সর্বশেষ প্রবন্ধটি হচ্ছে মিথ্যা গেরস্থলি, কুহকী প্রেম। এইখানে একটি ওড়িয়া উপন্যাসের বাংলা অনুবাদ নিয়ে তিনি আলোচনা করেছেন। উপন্যাসটির মূল লেখক সরোজিনী সাহুর। বইটির নাম  গম্ভিরি ঘরা। যার বাংলায় অনুবাদ করলে দাঁড়ায় মিথ্যা গেরস্থালি। বইটির বঙ্গানুবাদ করেছেন দিলওয়ার হোসেন। এবং সম্পাদনা করেছেন মোরশেদ শফিউল হাসান।

আনিসুল হকের আলোচনায় আমরা যা জানতে পারি তা হলো, এই উপন্যাসের নায়ক থাকে পাকিস্তানে এবং নায়িকা থাকে ভারতে। তাদের মধ্যে প্রেম হয় ইন্টারনেট এবং টেলিফোনে। তাদের দুজনে ভিন্ন দেশের মানুষ। ভিন্ন আচার-ব্যবহার। কিন্তু একদিন তাদের ভালোবাসার মাঝে এসে দাঁড়ায় রাষ্ট্র। তাদের দুজনের মাঝে তৈরি হয় অপ্রাপ্তির বেদনা। আর সেই বেদনা নিয়েই উপন্যাস। এমন উপন্যাসের বহুল প্রচার কামনা করেন লেখক আনিসুল হক।

এরপর কবিতা নিয়ে প্রতিটি প্রবন্ধে এসেছে অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যত। আধুনিকতা, উত্তর-আধুনিকতা ও নজরুল প্রবন্ধে নজরুলের পাঠচর্চা ধীরে ধীরে স্তিমিত হয়ে যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করেন লেখক। তার কারণ হিসেবে তিনি বলেন কবিতায় আধুনিকতা ঢুকে গেছে। আর নজরুল আধুনিকতার কবি নয়। এই আধুনিকতা বলতে তিনি বুঝিয়েছেন, পুঁজিবাদী সমাজের ব্যক্তিমানুষের ক্লান্তি, বিবমিষা, নেতি ও শূন্যতার প্রকাশ।

এই কথার জের ধরে চলে যাওয়া যায় পূর্বের আলোচনায়। যেখানে বলা হয়েছিল, বর্তমান উপন্যাস ব্যক্তিমানুষের কথাই উপস্থিত থাকে। আসে না রাষ্ট্র। ব্যক্তি মানুষ মাত্রই তার শূন্যতার প্রকাশ। সেই শূন্যতাকেই আর আধুনিকতা বলে ধরে নেয়া হচ্ছে।

তবে এই প্রবন্ধে আমি এক নতুন তথ্য জানতে পারি। তা হলো, ফরাসি বিপ্লবের পরে ইউরোপে ঘটে আরেক বিপ্লব, যার নাম রোমান্টিকতা, যা বিশ্বসাহিত্যের জন্য আসলেই এক বিরাট ঘটনা।

আধুনিকতা নিয়ে এবং ইউরোপ নিয়ে এক চমৎকার আলোচনা পাঠক এই প্রবন্ধে পাবেন। যাকে বলা চলে তথ্যবহুল আলোচনা।

জীবনানন্দের একটি কবিতা পাঠ প্রবন্ধে আসে প্রকৃতির কবির কথা। শুরুই হয়েছে তাঁর অসামান্য কবিতা বাংলা মুখ আমি দেখিয়াছি, আমি তাই পৃথিবীর রুপ দেখিতে যাইনা আর:……’  এই কবিতা নিয়েও আলোচনা করেছেন তিনি। একইভাবে পরবর্তী অধ্যায়গুলোতে শামসুর রহমান, নির্মলেন্দু গুণের কাব্যসমগ্র নিয়েও আলোচনা করেছেন আনিসুল হক।

শুরুতেই আনিসুল হকের কথ্য ভাষার ব্যবহার নিয়ে বলেছিলাম। লেখা নিয়ে লেখা বইটিতে তাঁর মুখের ভাষা, আনুষ্ঠানিক ভাষা ও ভাষার রাজনীতি প্রবন্ধে এই বিষয়ে যথেষ্ঠ ব্যাখ্যা তিনি দাড় করেছেন।

যদিও এই রচনাটির উপলক্ষ হিসেবে তিনি একটি চিঠির জবাব। কালি ও কলম-এর বৈশাখী সংখ্যাতে পাঠকের চিঠির বিভাগে এক পাঠক জানায়, আনিসুল হকের উপন্যাস আরশিনগর পড়ে তিনি যগপৎ মুগ্ধ ও মর্মাহত হয়েছে। মুগ্ধ হয়েছেন, তাঁর ভাষায়, রচনায় বিষয়বৈচিত্র্যে, লেখনীর সাবলীলতায়। আর তিনি মর্মাহত হয়েছেন ওই উপন্যাসের ২১৫ পৃষ্ঠার কিছু আপত্তিকর শব্দ ব্যবহারে।

আমার ধারণা এমন প্রশ্ন কিংবা পাঠক প্রতিক্রিয়া আনিসুল বহুবার পেয়েছেন। তবে এই প্রথম হয়তো লেখার মাধ্যমে তিনি ব্যাখ্যা দাঁড় করাতে পেরেছেন। তিনি উল্লেখ করেছেন, ‘….খারাপ কথা-ভালো কথার বিভাজন আছে আর সেই জানা না-জানা দিয়ে ভদ্রলোক-ছোটলোক নির্ধারণের একটা নিরিখও আছে। ভাষার কোন নৈতিকতা নেই। ভাষার কোনো ভাল-খারাপ নেই। ভাষার কোন গোপনতা নেই।

এসেছি, করেছি এই শব্দগুলো সাহিত্যে আছে তা ভালো কথা। কিন্তু কোনও লেখক যদি তার আঞ্চলিক ভাষায় সাহিত্য রচনা করতে চান তাহলে তা অপরাধ হবে। এসেছি-কে যদি তাঁর আঞ্চলিক ভাষায় লিখতে চান তবে কি সাহিত্য বিচারক কিংবা পাঠক সমালোচকবৃন্দ না মেনে নেবেন না?

অবশ্যই মেনে নিতে হবে। তাই আমিও আনিসুল হকের সাথে একমত পোষণ করে বলতে চাই আমাদের দৈনন্দিন কথ্যভাষাটিকে সাহিত্যের ভাষায় নিয়ে আসাটা অপরাধ অবশ্যই হবে না।

সর্বশেষ প্রবন্ধ বাঙালির শরীর, শরীরের ভাষা  সাহিত্যে সেক্স নিয়ে আলোচনা আমার সত্যিই কখনও পড়া হয়নি। এতো চমৎকার সব বিষয় আনিসুল হক তুলে এনেছেন যা সত্যি মুগ্ধ হওয়ার মতো।

কামকে সাহিত্যের অন্যতম অংশ হিসেবে ধরা হয়। কারণ, পুরাণগুলোতে দেখা যায় কাম হচ্ছে অন্যতম। প্রেম হলেই কাম হতে হবে। কামকে প্রেমের বহিঃপ্রকাশ হিসেবেই ধরে নেয়া হতো। তিনি বলেন উল্লেখ করেন, বাংলা সাহিত্যে কামকে রোমান্টিকতার পোশাকে ঢাকতে শুরু করে বঙ্কিমচন্দ্র। অতি নৈতিকতা যৌনতাকে অশ্লিল করে তোলে। রবীন্দ্রনাথও খুব সহজে যৌনতাকে সাহিত্যে প্রশ্রয় দেননি। তবে মাঝেমাঝে তিনি পদ্য রচনার ক্ষেত্রে ব্যবহার করেছেন বিভিন্ন অঙ্গের কথা। যেমন: স্তন, চুম্বন ইত্যাদি।

ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায় আমাদের মুসলমান পূর্বপুরুষের ধার্মিক ছিলেন। কিন্তু ঠিকই দেখা যায় তারা মদ, বাঈজি সবই প্রশ্রয় দিতেন। তাহলে অবশ্যই একটা সময়ে এসে এগুলো অশ্লিলতার দিকে চলে যায়। স্ববিরোধিতার বিচিত্ররূপ অংশে আনিসুল হক বলেছেন, বাংলাদেশে কামের স্বীকৃতি নেই, এ এক ভীষণ নিষিদ্ধ বিষয় এদেশে। এর ফল নিশ্চয়ই মারাত্মক; দেশে কোন পরিসংখ্যান নেই, কোনো জরিপ নেই, সুতরাং কত মারাত্মক বলা মুশকিল। যৌনতা যে কিভাবে আমাদের সমাজে ঘিরে রয়েছে তা অত্যন্ত ভয়াবহ। ঢাকার নার্সিং হোমগুলোতে গর্ভপাতের হার আশংকাজনক বলেও মন্তব্য করেন আনিসুল হক।

আনিসুল এক পর্যায়ে বলেই বসেন, নো সেক্সের সমাজে আসলে চলছে সব। সত্যিই আমাদের সমাজে যা নিষিদ্ধ তা বরং অধিক আকারেই চলে। এটাই নিয়তি সমাজের।

আনিসুল হকের লেখা নিয়ে লেখা বইটি সাহিত্য পাঠকদের অন্যরকম আনন্দ দিবে। তথ্যবহুল প্রবন্ধ হওয়ার সাথে সাথে গল্পের ছলে ভিন্ন ধরনের বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনার জন্য লেখক সত্যিকার অর্থেই প্রশংসারযোগ্য।

লেখা নিয়ে লেখা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to top