প্রসঙ্গ স্বাধীন চলচ্চিত্র

১৯৭১ সালে রক্তাক্ত এক অধ্যায়ের মধ্যে দিয়ে লাল সবুজের দেশ বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করে। মূলত তার লড়াইটা ছিল অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক মুক্তির লক্ষ্যে। চলচ্চিত্রও ছিল সংস্কৃতির অন্যতম হাতিয়ার। স্বাধীনতার লক্ষ্যে যখন লড়াই শুরু হয় তখন থেকেই চলচ্চিত্র নির্মাণে মনযোগী হয় জহির রায়হানের মতো চলচ্চিত্র নির্মাতারা। আর তাই তো তার হাত দিয়েই ১৯৭০ সালে নির্মাণ হয়েছে দেশের প্রথম অন্যতম স্বাধীন চলচ্চিত্র ‘জীবন থেকে নেওয়া’-এর মতো ঐতিহাসিক বাস্তবতার ছবি। বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাস নিয়ে বিস্তর আলোচনা করা যেতে পারে। কিন্তু ৭১ পরবর্তী সময়েই ঢাকার চলচ্চিত্র নিজস্বতা পেয়েছিল, এ কথা স্বীকার করতেই হবে।
স্বাধীনতার পর প্রথমলগ্ন থেকেই লড়াইটা চালিয়ে ছিলেন আলমগীর কবির, তানভীর মোকাম্মেল, মোরশেদুল ইসলাম, চাষী নজরুল ইসলাম সহ আরও অনেকে। তারা তখন ভালো মানের চলচ্চিত্র নির্মাণ করলেও কিছু প্রযোজকরা মূলধারার চলচ্চিত্র নামে মারদাঙ্গা নির্ভর চলচ্চিত্র নির্মাণ করার বিষয়ে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। তার কারণ অবশ্য ‘চাহিদা’। ভারতীয় চলচ্চিত্রের রেসিপি নিয়ে দর্শক চাহিদার ঠুনকো অযুহাতে তখন নাচ-গান-মারামারি দৃশ্যই যেন মূখ্য হয়ে ওঠে। এসব চলচ্চিত্রকে আমরা চিনি ব্যবসা নির্ভর চলচ্চিত্র হিসেবে। এছাড়া এসব চলচ্চিত্রের নির্মাতারা ছিলেন বিএফডিসি নির্ভর। কিন্তু প্রশ্ন থাকতে পারে, ব্যবসা করতে চায় না কোন চলচ্চিত্র?
বাস্তবতা হলো- এফডিসি প্রতিষ্ঠার শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ভালো-মন্দ মিলিয়ে চলচ্চিত্র নির্মিত হয়ে আসছে। এসবের মধ্যেই কোনও প্রযোজক ব্যবসা করছেন, কোনও প্রযোজক অর্থিক ক্ষতির শিকার হয়েছেন এবং হচ্ছেন। এটি এখন স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই ভেবে নেওয়া যায়। তখন থেকে এখনও ব্যবসার চিন্তা-ধারার ঊর্ধ্বে গিয়ে কিছু নির্মাতা নির্মাণ করেন জীবনবোধের চলচ্চিত্র। আর তাকেই আমরা নাম দিতে পারি ‘স্বাধীন চলচ্চিত্র’। কারণ এই চলচ্চিত্র এফডিসির চারগণ্ডি তথা দেশের সীমানা পেরিয়ে বিশ্বের নানা উৎসব জয় করছে হরহামেশা। তাইতো ‘জীবন থেকে নেওয়া’ থেকে ‘জালালের গল্প’ পর্যন্ত দেশীয় স্বাধীন চলচ্চিত্রের পাখা ক্রমশ মেলছে।


বাংলাদেশের স্বাধীন অথবা বিকল্পধারার চলচ্চিত্র:

বাংলাদেশে স্বাধীন অথবা বিকল্পধারার চলচ্চিত্রের মূল ধারণাটিই আসে ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সংসদ’ আন্দোলনের মাধ্যমে। বিএফডিসির বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রে প্রেম, যৌনতা, মারপিট, ধর্ষণ নির্ভর কাহিনীর শিল্পমান নিয়ে ব্যাপক প্রশ্নের তৈরি হয়। সেখানে বিকল্পধারার পরিচালকরা বাস্তব সমাজচিত্র, মধ্যবিত্ত মানুষের জীবনধারা নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ করার চেষ্টা শুরু করেন। আর এই বাস্তবতার পক্ষে সবচেয়ে বেশি সোচ্চার ছিল চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনের কর্মীরাই। ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যাবে এযাবৎ আন্তর্জাতিক মানের বা আন্তর্জাতিক খ্যাতি বয়ে আনা চলচ্চিত্রগুলোর সবক’টি চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনের কর্মী বা নির্মাতাদের অর্জন। স্বাধীনতার পর সত্তর দশকের শেষে ‘সূর্য দীঘল বাড়ি (১৯৭৯)’ ছিল অসাধারণ বিকল্পধারার চলচ্চিত্র। এই ছবির মাধ্যমেই সূত্রপাত হয় বিকল্পধারার। সূর্য দীঘল বাড়ির মাধ্যমেই বাংলাদেশের চলচ্চিত্র প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক পরিচিতি অর্জন করে।


বলে রাখা ভালো, চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শেখ নেয়ামত আলী এবং মসিহউদ্দিন সাকের নির্মাণ করেন ‘সূর্য দীঘল বাড়ি’। যে ছবিটি সে সময় বিদেশি বিভিন্ন উৎসবে পাঁচটি পুরস্কার পায়।
এই স্রোতে অনেকেই নৌকা ভেড়ানো শুরু করেন। উৎসাহিত হয়ে অনেকের হাত দিয়েই নির্মিত হতে থাকে বিকল্পধারার বেশ কিছু চলচ্চিত্র। আবার অনেকে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রও নির্মাণ শুরু করেন। ১৯৮৪ এবং ১৯৮৫ সালে মোরশেদুল ইসলাম পরিচালিত ‘আগামী’ এবং তানভীর মোকাম্মেল পরিচালিত ‘হুলিয়া’ বাংলাদেশে একদিকে যেমন স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রচর্চার পথকে উন্মুক্ত করেছে তেমনি বিকল্পধারার চলচ্চিত্র সৃষ্টির ধারাবাহিকতাকেও মজবুত করতে ভূমিকা রেখেছে।
যার ফলে বাণিজ্যিক ধারার একঘেয়েমী চলচ্চিত্রের কাহিনী দেখে বিরক্ত এক শ্রেণির দর্শক আলাদা হয়ে বিকল্পধারার চলচ্চিত্রের দিকে মনোনিবেশ করেন।
স্বাধীন চলচ্চিত্রের দাপট:
আশির দশকের শেষ থেকেই চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা আরও সোচ্চার হওয়া শুরু করেন। তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন মোরশেদুল ইসলাম। তিনি তখন পরিণত। ‘আগামী (১৯৮৪)’ ছবির মাধ্যমেই তিনি তার দক্ষতা প্রমাণ করেছিলেন। পরে ১৯৯৩ সালে তার পরিচালনায় ‘চাকা’ মুক্তি পায়। চলচ্চিত্রম ফিল্ম সোসাইটির প্রযোজনায় ছবিটি মুক্তি পায়। দর্শকদের ব্যাপক প্রশংসা কুড়ায় ছবিটি। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি স্বাধীন চলচ্চিত্র নির্মাতাদের। শক্ত হাতে হাজির হতে থাকেন আরও বহু নির্মাতা। যার মধ্যে তারেক মাসুদ অন্যতম। যদিও এর আগে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘আদম সুরত (১৯৮৯)’ –এর মাধ্যমে তিনি যাত্রা শুরু করেন। কিন্তু সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আসেন ‘মুক্তির গান (১৯৯৫)’, ‘মাটির ময়না (২০০২)’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে। তার হাত দিয়েই নির্মিত হয় ‘অন্তর্যাত্রা (২০০৬)’ এবং ‘রানওয়ে (২০১০)’। বাংলা চলচ্চিত্রকে এক ভিন্নমাত্রার স্বাদ দেন তারেক মাসুদই। আন্তর্জাতিকভাবে বাংলা চলচ্চিত্রকে পৌঁছে দিতে তার ভূমিকা অনবদ্য। নব্বই দশকের গোড়ার দিকে নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদের ‘আগুনের পরাশমনি’ ও অনবদ্য এক স্বাধীন চলচ্চিত্রের মাইলফলক হয়ে আছে আজও।
তারেক মাসুদ-হুমায়ুন আহমেদ ছাড়াও ২০০০ সালের পর থেকে বহু নির্মাতা শক্ত হাতেই নির্মাণে মনোনিবেশ করেন। বিশেষ করে অন্যরকম গল্প বলার ঢং নিয়ে হাজির হয় মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। প্রথমে নাটকের মাধ্যমে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করা ফারুকী ২০০৩ সালে ‘ব্যাচেলার’ ছবির মাধ্যমে ভিন্নস্বাদের সিনেমা দর্শকদের সামনে হাজির করেন। যদিও প্রিমিয়ার শো একটি টিভি চ্যানেলে হওয়ায় ব্যাপক বিতর্কেরও সৃষ্টি হয়। ড্রয়িং বা বেডরুমে বসে যে চলচ্চিত্র দেখে ফেলা যায় সেখানে চলচ্চিত্র শিল্প কতটা লাভবান হবে তাই নিয়ে শুরু হয় বিতর্ক। কিন্তু কোনও বিতর্কই টেকে না, যদি না নির্মাতা তার কাজে মনযোগী থাকেন। ফারকীর হাত দিয়েই তৈরি হতে থাকে ‘মেড ইন বাংলাদেশ (২০০৭)’, ‘থার্ড পার্সন সিঙ্গুলার নাম্বার (২০০৯)’, ‘টেলিভিশন (২০১২)’ এবং ‘পিঁপড়াবিদ্যা (২০১৪)’, ‘ডুব (২০১৭)’। এসব ছবির মধ্যে ‘টেলিভিশন’ এবং ‘পিঁপড়াবিদ্যা’ আন্তর্জাতিকভাবে যথেষ্ট সুনাম এবং পুরস্কার অর্জন করে।


ফারুকী ছাড়াও এই পথে সম্প্রতি আরও নির্মাতারা হাজির হয়েছেন।

স্বাধীন চলচ্চিত্রের দাপট মূলত উৎসবে:
২০১৫ সালে আশরাফ শিশির পরিচালিত চলচ্চিত্র ‘গাড়িওয়ালা’ ছবিটি মুক্তি পায়। ছবিটি এরই মধ্যে ১৯টি দেশের ৫৫টি শহরে ৫৫টি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শনের যোগ্যতা অর্জন করেছে। পেয়েছে ২১টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার। অথচ দেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তির পর চিত্রটা পুরো উল্টে গেল। প্রেক্ষাগৃহে কপি-পেস্ট ছবির ভিড়ে দর্শকের কাছে আগ্রহের ঘাটতি নিয়েই ‘গাড়িওয়ালা’র গাড়ি চলেছে ঢিমেতালে।
‘গাড়িওয়ালা’ সংশ্লিষ্ট সবাই যেভাবে বিদেশে প্রচার প্রচারণায় সময় ব্যয় করেছেন ঠিক সেভাবে দেশে প্রচারে তেমন বড় কোনও উদ্যোগও দেখা যায়নি। অনেকেই দাবি করেন, যেসব সিনেমা আগে বিদেশে মুক্তি দেওয়া হয়, সে সব সিনেমার মূল উদ্দেশ্যই থাকে পুরস্কার, দর্শককে হলে টানা নয়।
অথচ এর এক মাস আগেই এমনই একটি ভিন্নধাঁচের সিনেমা আবু শাহেদ ইমনের ‘জালালের গল্প (২০১৫)’ মুক্তি পেয়েছে। ওই সিনেমাও বিদেশে মুক্তি দিয়ে অনেক পুরস্কার নিয়ে এসেছে। কিন্তু সত্যিকার অর্থে দেশে তার প্রচার ছিল ব্যাপক। যে কারণে ভিন্নস্বাদের হলেও দর্শকের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে জায়গা করে নিয়েছিল ‘জালালের গল্প’।


বিকল্প বনাম বাণিজ্যিক চলচ্চিত্র:
বিকল্প মানেই অন্যরকম সিনেমা বিষয়টি কেমন যেন দ্বান্দিক হয়ে পড়ে। আসলেই সিনেমা বা চলচ্চিত্র একক পরিচয় থাকাটাই প্রয়োজনীয় ছিল। কিন্তু ঢাকায় চলচ্চিত্র পাড়ার কর্তাদের নির্মাণের ভেতর জীবন-সমাজ অনুপস্থিত থাকে। সস্তা বিনোদনের খোরাক সেখানে তৎপর থাকে। এসবকে পেছনে ফেলতে চায় একদল নির্মাতা। তারা জীবনবোধকে তুলে ধরতে চায়, সমাজের সঙ্গে কথা বলতে চায়। আর তাই তাদের নির্মাণই নাম পেয়েছে ‘বিকল্পধারা’। প্রয়াত বিশিষ্ট চলচ্চিত্র সাংবাদিক আওলাদ হোসেন এ বিষয়ে একটি লেখাও লিখেছেন। যেখানে তিনি বলেছেন,
‘অনেক আগে একবার চলচ্চিত্র শিল্প দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছিল। একটা মূলধারা, অন্যটি বিকল্পধারা। কিন্তু এই বিভাজন চলচ্চিত্রের উন্নয়নের পরিবর্তে ক্ষতিই করেছে। মূলধারার চলচ্চিত্রের বড় একটা অংশ অশ্লীলতার জোয়ারে গা ভাসিয়েছিল, আর বিকল্পধারার চলচ্চিত্র প্রশংসিত হয়ে পুরস্কার অর্জন করলেও দর্শকদের আস্থা অর্জন করতে পারেনি। ফলে দীর্ঘ সময় কোনও ধারাই দর্শককে না পেরেছে বিনোদন দিতে, না পেরেছে চলচ্চিত্রের উন্নয়ন ঘটাতে। সম্প্রতি বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে অত্যাধুনিক ডিজিটাল প্রযুক্তি প্রবর্তন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চলচ্চিত্র শিল্প আবার দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। মূলধারার প্রতিদ্বন্দ্বী এবার মিডিয়া।’
আওলাদ হোসেন সবধারাকেই দর্শক টানতে না পারার ব্যর্থতার দায় দিতে চান। আর তাছাড়া বাংলাদেশের দুইটি দলকে একে-অপরকে প্রাপ্য সম্মান দিতেও কুণ্ঠাবোধ করেন না। চলচ্চিত্র নিয়ে যারা ব্যবসা করতে চান তাদের অধিকাংশই সবসময়ই বিকল্পধারাকে অবদমন করার চেষ্টা করে গেছেন। কিন্তু দর্শকের জোয়ারে এই কিছু সংখ্যক লোকের দ্বারা তৈরি দুষ্টুচক্র সুবিধা করতে পারেনি। এ সংক্রান্ত একটি উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। ১৯৮৪ সালে ‘সুরুজ মিয়া’ নামে একটি চলচ্চিত্র মুক্তি পায়। প্রচলিত বা মূলধারারই একটি জীবনবাদি, সৎ, পরিশালীত এবং মননশীল বিনোদননির্ভর এই চলচ্চিত্রকে কেন্দ্র করে ব্যবসানির্ভর চক্র ষড়যন্ত্র করে চলচ্চিত্রটিকে প্রেক্ষাগৃহ থেকে নামিয়ে নেয়। কিন্তু দেখা গেল সচেতন দর্শকসমাজ রাজপথে গেল। ওই চলচ্চিত্র প্রদর্শনের জন্য দাবি জানালো। এই আন্দোলনের ফলে ‘সুরুজ মিয়া’ আবার ফিরে গেল প্রেক্ষাগৃহে।
অর্থাৎ এই দুই পক্ষের দ্বন্দ্ব খুব একটা পুরাতন নয়। একটু খোঁজ নিলে দেখা যাবে বিএফডিসি থেকেই চলচ্চিত্র নির্মাণের পর একটি বিশেষ চক্র সারাদেশে চলচ্চিত্র নিয়ন্ত্রিত করে। এই নিয়ন্ত্রকগোষ্ঠী সবসময় সব চলচ্চিত্রকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসার চেষ্টা চালায়। এই চেষ্টার বৃত্তকে ভাঙতেই স্বাধীন তথা বিকল্পধারার নির্মাতারা আন্দোলন জারি রেখেছে। তাদের আন্দোলনের জোয়ারে এখন মধ্যবিত্ত দর্শক প্রেক্ষাগৃহে ধীরে ধীরে ফিরতে শুরু করেছে। তবুও ‘চলচ্চিত্র’ একক পরিচয়ের সাইনবোর্ড দেখতে চায় সাধারণ দর্শক।

প্রসঙ্গ স্বাধীন চলচ্চিত্র

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to top